বেশি বসে থাকা জীবনযাপন আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। দিনের বেলা আপনি যত কম বসবেন বা শুয়ে থাকবেন, স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের সম্ভাবনা তত ভাল। আপনি যদি দিনের বেলা বেশি কর্মচঞ্চল থাকেন বা ঘোরাফেরা করেন তবে আপনি কোনো ডেস্কে বসে থাকা কারোর চেয়ে অসুস্ত হবার ঝুকিতে কম থাকবেন। আপনি যদি বেশিক্ষণ বসে থাকা জীবনযাপন করেন তবে আপনার ওজন বেশি হওয়া, টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ এবং হতাশা ও উদ্বেগের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কীভাবে বসে থাকা জীবনধারা আপনার দেহে প্রভাব ফেলবে?
মানুষের শরীর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ভালো কাজ করে, আপনার হার্ট এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমটি আরও কার্যকরভাবে কাজ করে। আপনি সোজা থাকলে আপনার অন্ত্র আরও দক্ষতার সাথে কাজ করে। হাসপাতালে শয্যাশায়ী ব্যক্তিদের অন্ত্রের ক্রিয়াকলাপে সমস্যা অনুভব করা খুব সাধারণ। অন্যদিকে আপনি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকাকালীন, আপনার সামগ্রিক শক্তির স্তর এবং সহনশীলতা উন্নত হয় এবং আপনার হাড় শক্তি বজায় রাখে। বেশি বসে থাকা জীবনযাপনের জন্য যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন, তা হল-
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার ফলে বড় পা এর পেশী দুর্বল হয়ে যায়। যে পেশীগুলি হাঁটার জন্য এবং আপনাকে স্থিতিশীল (সোজা) রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- আপনার পেশীগুলির নড়াচড়া আপনার চর্বি এবং শর্করাগুলি হজম করতে সাহায্য করে। আপনি যদি বসে প্রচুর সময় ব্যয় করেন তবে হজম দুর্বল হবে, তখন আপনার শরীরের চর্বি হিসাবে সেই চর্বি এবং শর্করা গুলো জমতে থাকবে, এবং যা আপনার স্থূলতা বাড়ায়।
- আমরা বেশি বসে থাকা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্কগুলি বুঝতে পারি না, আমরা অনেকেই জানিনা যে বেশি বসে থাকা মানসিক উদ্বেগ ও হতাশার ঝুঁকি বাড়ায়।
- কিছু সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে যে বেশি বসার ঝুঁকিগুলি ফুসফুস, জরায়ু এবং কোলন ক্যান্সার সহ কিছু ধরণের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এর পেছনের কারণ এখনও জানা যায়নি।
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা হৃদরোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সপ্তাহে ২৩ ঘণ্টার বেশি টেলিভিশন দেখেন এমন পুরুষরা সপ্তাহে কেবল ১১ ঘন্টা টেলিভিশন দেখা পুরুষদের তুলনায় কার্ডিওভাসকুলার রোগে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ৬৪ শতাংশ বেশি। কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন যেসব ব্যক্তিরা নিষ্ক্রিয় থাকেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকেন তাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকির পরিমাণ ১৪৭ শতাংশ বেশি থাকে।
সক্রিয় হওয়া যতটা কঠিন আপনি ভাবেন তেমন কঠিন নয়। আপনার দিনে কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রচুর সহজ উপায় রয়েছে। আপনার দিনের সূচিতে বেশি কাজ বা কিছু উপায় রাখুনঃ
১. দীর্ঘ সময় হাঁটুন।
২. সাইকেল চালান সুযোগ থাকলে।
৩. লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৪. বাস থেকে গন্তব্যের কিছু আগে নেমে যান, বাকিটা হেঁটে যান।
৫. আপনার কাজ গুলো এমন ভাবে সাজান যেন আপনাকে বেশি হাঁটতে হয়।
৬. বসে আড্ডা না দিয়ে হেঁটে হেঁটে গল্প করুন।
৭. মাঝে মাঝে সাঁতার কাটার সুযোগ তৈরি করুন।
৮. যোগ ব্যায়াম করতে শিখুন এবং সময় নির্ধারণ করে সেটা করুন।
অলস বৈশিষ্ট্য গুলো বাদ দিয়ে সবসময় চলাচলের মধ্যে থাকুন। বয়স হয়ে যাওয়া মানে বসে বসে গল্পের বই বা সংবাদপত্র পড়া না, ইজি চেয়ার বা আরাম কেদারা থেকে নিজেকে দূরে থাকুন। শরীরকে প্রয়োজনের বেশি বিশ্রাম দিলে সেটা আপনার শরীরের জন্যই ক্ষতির কারন হবে, তাই বেশি বসে থাকা বর্জন করে নিজের শারীরিক সুস্থতার জন্য চলমান বা কর্মঠ থাকুন, কারন নিজের শরীর নিয়ে না ভাবলে কোনো প্রকার অসুস্থতা চলে আসলে তার যন্ত্রণা কেবল আপনাকেই বহন করতে হবে। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফার্মাসিস্ট মিঠুন সমদ্দার
No comments:
Post a Comment